নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা | ৭ এপ্রিল ২০২৫: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় আবারো নতুন মোর। ইতিমধ্যেই রাজ্যে বিতর্কিত ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় আজ বড়সড় আপডেট দিল কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এই মামলা শুনানি থেকে সরে দাঁড়ালেন, এখন এই মামলাটি কোন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে এই নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে সকলের মনে। তবে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে এখন এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি কোন ডিভিশন বেঞ্চে যাবে, তা ঠিক করবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
কী ছিল মামলার প্রেক্ষাপট?
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই মামলার প্রধান কারণ ছিল এখানে যে নিয়োগ করা হয়েছিল সেখানে কোন অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। ফলে এই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট এবং বাতিল করা হয়েছিল পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে আরো অভিযোগ ছিল, প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম ঘটেছে। আদালতের আগের পর্যবেক্ষণে একাধিক ভুল ও অসঙ্গতি প্রমাণিত হওয়ার পর, ৪২ হাজার চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ৩২ হাজারেরও বেশি নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে রিভিউ আবেদন করেন অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী। এর পরবর্তী সময়কাল থেকে এই মামলারই শুনানি চলছিল বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমার-র গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে।
হঠাৎ কেন সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি সেন?
সোমবার হাইকোর্টে শুনানি শুরুর পরই বিচারপতি সৌমেন সেন জানান, ব্যক্তিগত কারণে তিনি এই মামলার শুনানি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন অর্থাৎ তিনি আর এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন না। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি, এর ফলে আইনি মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে।
এখন কী হবে?
তবে বিচারপতির সরে দাঁড়ালেও এই মামলাটি শেষ পর্যন্ত কোন বেঞ্চে শুনানি হবে তা নিয়ে সকলের মনে রয়েছে গভীর প্রশ্ন। মামলার ভবিষ্যৎ শুনানি কোন বেঞ্চে হবে, এ ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব এখন প্রধান বিচারপতির হাতে। কোন বেঞ্চে হবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পরে মামলাটি সেখানে স্থানান্তরিত করবেন।
আইনি ও রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
ইতিমধ্যে এই মামলা নিয়ে বিস্তর উত্তোলন এবং তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। ইতিমধ্যেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বহু অযোগ্য চাকরি প্রার্থীরা ঘোরপথে টাকা দিয়ে বা স্বজনপোষণের দ্বারা চাকরি পেয়েছেন। এর ফলে বহু চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি হয়নি এবং তারা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তবে অনেককেই মনে করছেন বিচারপ্রতি সেনের সরে দাঁড়ানোর পিছনে হয়তো এই মামলাটা বিলম্বিত করার একটি পন্থা রয়েছে। তবে যে পন্থা অবলম্বন করা হোক না কেন কলকাতা হাইকোর্ট যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে বিকল্প বেঞ্চ নির্ধারণ করবে এবং এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিক ঘটবে বলে আশাবাদী সকলেই।
অনেকেই মনে করছেন বিচারপতি সৌমেন সেনকে এই মামলা থেকে সরে যাওয়া উচিত হয়নি কারণ যেখানে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ এই মামলার উপর নির্ভর করছে, সেখানে এমন একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয় । এবার সকলের দৃষ্টি প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের উপর কারণ — কোন বেঞ্চে যাবে এই মামলার ভবিষ্যৎ, এবং কত দ্রুত মিলবে চূড়ান্ত রায়। কারণ অনেকে চিন্তিত রয়েছেন তাদের ভবিষ্যৎ চাকরি নিয়ে।