প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিরাট বড় উদ্যোগ পর্ষদ সভাপতির! তীব্র গরমে স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন

By Target Chakri

Published on:

শীত যেতে না যেতেই শুরু হয়ে গিয়েছে চৈত্রের প্রখর রোদ। পশ্চিমবঙ্গের একের পর এক জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক স্কুলগুলির পঠন পাঠনে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে তাই স্কুলের পঠন-পাঠনের সময়সূচি পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে বিভিন্ন জেলার স্কুল প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করা শুরু করেছে। বিশেষ করে খুদে ছাত্র-ছাত্রীদের তীব্র দাবদাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার মান যাতে বজায় থাকে তার জন্য সম্ভাব্য সময়সূচি পরিবর্তনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জেলাগুলির মতামত চাওয়া হয়েছে:

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদের দপ্তর থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলার ডিপিএসসি চেয়ারম্যানদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেকটি স্কুল প্রধানের কাছ থেকে এই চিঠিতে স্কুলের বর্তমান সময়সূচি কেমন চলছে এবং গরমের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দিনের দ্বিতীয় সেশনে (ডে-সেশন) অর্থাৎ যেগুলো স্কুল দুপুর থেকে চালু হয় সেই সমস্ত স্কুলগুলির ক্ষেত্রে সকাল সকাল ক্লাস শুরু করার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এই ব্যাপারেই বিশেষ করে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে।

পর্ষদ সভাপতির বক্তব্য:

পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, “আমরা জেলাগুলির বাস্তব অবস্থা বুঝতে চাইছি এজন্য বিভিন্ন ডিপিএসসি গুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে মঙ্গলবারের মধ্যে সব রিপোর্ট পেলে তা স্কুল শিক্ষা দপ্তরে পাঠানো হবে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেছেন এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বর্তমান পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার উপর বিচার-বিশ্লেষণ করে নেওয়া হবে।

 

তাপমাত্রার বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে আমরা পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখতে পায় :

১- দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিশেষ করে ৮টি জেলায় তাপমাত্রা ৪০°C ছাড়িয়েছে।

২- ইতিমধ্যেই গ্রীষ্ম শুরু হতে না হতেই কলকাতার দমদমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.২°C ।

৩- ইতিমধ্যেই পশ্চিমের কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে।

৪- আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে।

৫- তবে উত্তরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে।

সময়সূচি পরিবর্তনের সম্ভাব্য রূপরেখা:

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়সূচি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে:

1. বর্তমানে দুপুরে স্কুলের পরিবর্তে স্কুলের সময়সূচি সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত করা হতে পারে।

2. দুপুরের ক্লাস বাতিল করে সকালের সেশন চালু করতে হবে।

3. যেসব জায়গায় প্রচুর গরম পরবে এবং রৌদ্রের প্রখর তাপ সেখানে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে।

4. স্কুলের সমস্ত ক্লাসরুমে কুলিং ব্যবস্থা চালুর উপর জোর দিতে হবে এজন্য প্রত্যেকটি ক্লাসরুমে পাখা লাগাতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

বর্তমানে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মত দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু মুখোপাধ্যায়ের বলেছেন, “৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় শিশুদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই অবস্থায় সকালের দিকে সময়সূচি সীমিত রাখা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত হবে।” অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এই মতকে সমর্থন জানিয়েছেন।

আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে সব জেলা থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ স্কুল শিক্ষা দপ্তরে সুপারিশ পাঠাবে। এই তথ্য আসার পরেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। যদি সম্ভাব্য সময়সূচি পরিবর্তন কার্যকর করা হয় তাহলে সেটি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চালু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিবছরই গরমের তীব্রতা বাড়ছে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিক্ষার মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া বিশেষ জরুরি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিশেষ করে আগামী মঙ্গলবার এর মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

Leave a Comment